ইনসানে কামেল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

আকাঈদে ইসলাম (আকীদায়ে ইসলাম)

 

ঈমান ও একীনকে পরিপূর্ণ ও দৃঢ় রাখার প্রধান উপকরণই হলো আকীদা বা আকীদায়ে ইসলাম। আকীদা, আকায়েদ এতেকাদ- এ সব আরবী শব্দগুলির অর্থ প্রায়ই এক, মনের অটল বিশ্বাস। আর আকীদাই হলো ঈমানের অন্তর। আকীদার মধ্যে বিন্দুমাত্র ত্রুটি বা সন্দেহ থাকলে মানুষ ঈমানরূপ মহা দৌলতকে হারিয়ে বেঈমান, মরদুদ এবং চির জাহান্নামী হয়ে মৃত্যু বরণ করবে।
পূর্ণ ইসলামিক আকীদায় শরীয়তের যাবতীয় কাজগুলোর জ্ঞান (এলেম) যার অন্তরে না আসবে, বুঝ পয়দা না হবে, তার দীলে আল্লাহর তাওহীদি রাবুবিয়াতের আজমত পয়দা হবে না এবং সে এই অন্তর দিয়ে আল্লাহকে রাজি করার মতো এবং আল্লাহর দরবারে মকবুল হওয়ার মতো যোগ্য এবাদত কিছুতেই করতে পারবে না। এর ফলাফল হিসাবে সে অবশ্যই আল্লাহর শাহী দরবারে ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হবে।
মানুষ যাতে তার ক্ষুদ্র জ্ঞান, মন ও মস্তিষ্ক দ্বারা বিষয়টি বুঝতে পারে সে জন্য এই আকীদাগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ- ১। আকীদায়ে ইসলাম ২। এবাদত ৩। মোয়মালাত ৪। মোয়াশারাত ৫। তাজকীয়ায়ে বাতেন।

১। আকীদায়ে ইসলাম:– ধর্মের মূল বিষয়গুলির প্রতি অন্তরে অটল বিশ্বাস রাখাই আকীদায়ে ইসলাম।

২। এবাদত:– নবী করিম (সাঃ)- এর তরিকা অনুযায়ী হুবহু সকল এবাদত করা। অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত সকল কাজ তাঁর নির্দেশ মত পালন করা। তিনি যে ভাবে যা করতে, যা বলতে, যা বুঝতে এবং যে বিষয়ে যেরূপ ধ্যান ধারণা করতে বলেছেন, ঠিক সে ভাবে করতে হবে।

৩। মোয়ামালাত:– যাবতীয় কমর্, যেমন:- ব্যবসা-বানিজ্য, সংসার, রাষ্ট্র পরিচালনা ইত্যাদি রাসুলে পাকের তরিকা অনুযায়ী করা।

৪। মোয়াশারাত: – মানুষের সঙ্গে আচার-ব্যবহার, চাল-চলন, কথা-বার্তা সব কিছু নবী করিম (সাঃ)-এর তরিকা মতো করা।

৫। তাজকীয়ায়ে বাতেন:– আÍাকে পবিত্র করা (নফসের এসলাহ করা)। জাহের ও বাতেনকে দুরস্ত করা। সর্বদা আল্লাহ পাকের নির্দেশগুলি এমন আন্তরিকতার সাথে আদায় করা যাতে কোন ত্র“টি না থাকে। অন্তরে একমাত্র আল্লাহর ধ্যান-জ্ঞান, আল্লাহর জিকির-ফিকির ছাড়া কখনও যেন অন্য কোন চিন্তা না আসে। আর আল্লাহর বিধানের উপর যেন কখনও এতেরাজ অন্তওে পয়দা না হয় এ বিষয়ে সর্বদা অত্যন্ত হুঁশিয়ার থাকা।

ঈমানকে ত্র“টি মুক্ত রাখার জন্য আকীদাকে দুরস্ত করা অত্যন্ত জরুরী। আকীদার পবিত্রতাই হলো ঈমানকে পবিত্র বা মজবুত করার প্রধান অস্ত্র। তাই এ বিষয়ে এলেম শিক্ষা করা ফরজ।
মুক্তির আশা করলে আল্লাহ পাকের সকল হুকুম বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় মেনে চলতে হবে। আল্লাহ পাক বলেছেন-

“সুতরাং তুমি এবাদত কর, তার জন্য দ্বীনকে স¤পুর্ণ ভাবে (খালিস করে), নির্ভেজাল অবস্থায়, খালেছ অন্তরে (গায়রুল্লাহ হতে সম্পূর্ণভাবে নিজকে পৃথক করে)।”

আল্লাহ পাকের এই নির্দেশ পালন করতে হলে ঈমান ও আকীদাকে ঠিক মতো জেনে, বুঝে সঠিক ভাবে তা জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁকে সৃষ্টিকর্তা, পালন কর্তা, শান্তি দাতা, সর্বশক্তিমান এক কথায় সব কিছুর মালিক বলে জানতে হবে এবং তাঁর যাবতীয় গুণাবলীর মাহাত্ম্য অন্তরে উপলব্দি করতে হবে। আর সর্বদা চিন্তা করতে হবে যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীন কেন, কি উদ্দেশ্যে আমাদিগকে সৃষ্টি করে, হায়াত ও জ্ঞান দান করে দুনিয়ায় পঠিয়েছেন?

আল্লাহ পাক মানুষকে এ সকল বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে চলার জন্য এবং নিজের পরিচয় লাভ করে আল্লাহর ফর্মাবদ্দারী করার উপযুক্ত জ্ঞান দান করেই সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ সাধ্য মতো চেষ্টা করলেই সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রে কৃতকার্য হতে সক্ষম। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর এই জ্ঞানকেই আন্তরিকতার সাথে ব্যবহার করেছিলেন। আল্লাহর হাবীব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)ও ঐ জ্ঞানের আলোকেই নির্জনে নিভৃতে হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন।

এ ছাড়া আরও বহু মনীষির জীবনীতেও দেখা যায় তারা নিজেদের আমিত্ব, দুনিয়ার মোহ-মায়া, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে মোরাকাবায় (আল্লাহর ধ্যানে) মোশাহাদা করে আল্লাহর এই সৃষ্টি জগৎ, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, এর রহস্য এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও নিজের করণীয় বিষয় সমূহ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। তারপর নবী করিম (সাঃ)- এর তরীকায় আল্লাহর নির্দেশাবলী বাস্তবায়ন করে আল্লাহকে রাজি করিয়ে আল্লাহ প্রেমিক ব্যক্তি হিসাবে নিজেদেরকে পরিচিত করতে পেরেছেন। আল্লাহর অলীদের শানে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন-

“আল্লাহ পাক তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।”

অতএব আল্লাহ পাক যার প্রতি সন্তুষ্ট সে নিশ্চয়ই মঞ্জিলে মাকসুদে পৌঁছে গিয়েছেন। তাদের আর কোন ভয় নেই। সে সত্যিকার ভাগ্যবান।

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
“যে পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা অধিক ভালবাসা না জন্মা বে সে পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না।”
আসল কথা, ঈমান ও আকীদা দুরস্ত না করতে পারলে আল্লাহকে রাজী করার কোন উপায় নাই। আল্লাহকে পাওয়ার মূল বস্তুই হলো ছহী আকীদা।

(চলবে……………)

 

Related posts

Leave a Comment